সাঁওতাল বিদ্রোহের বিবরণ দাও।

ভূমিকা: ভারতের প্রাচীন বাসিন্দা আদিবাসী সাঁওতালরা বর্তমান বিহারের ছোটোনাগপুর, পালামৌ, মানভূম এবং বাংলার বীরভূম, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ বনভূমি অঞ্চলে বসবাস করত। তারা ১৮৫৫-৫৬  খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ইংরেজ সরকার, জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যা ‘হুল বিদ্রোহ’ বা ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।

[1] বিদ্রোহের কারণ: সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল-[i] সাঁওতাল কৃষকদের ওপর বিপুল পরিমাণ ভূমিরাজস্ব এবং অন্যান্য কর আরোপ, [ii] নগদে রাজস্ব পরিশোধের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে মহাজনদের হাতে দরিদ্র সাঁওতালদের উচ্চ সুদে ঋণের জালে জড়ানো, [iii] পণ্য ক্রয়বিক্রয়ে ব্যবসায়ীদের দ্বারা সরল সাঁওতালদের প্রতারণা, [iv] রেলের কাজে নিযুক্ত সাঁওতাল শ্রমিকদের কম মজুরি প্রদান, [v] সাঁওতালদের নিজস্ব আইন ও বিচার ব্যবস্থার বদলে ব্রিটিশ ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া, [vi] সাঁওতালদের নীলচাষে বাধ্য করা প্রভৃতি।

[2] বিদ্রোহের প্রসার: ক্ষুদ্ধ সাঁওতালরা ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ইংরেজ কোম্পানি, দেশীয় জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব, বীর সিং, কালো প্রামাণিক, ডোমন মাঝি প্রমুখ। ৩০ জুন প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহির মাঠে জড়ো হয়ে শোষণমুক্ত স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। বিদ্রোহীরা রেলস্টেশন, থানা, ডাকঘর প্রভৃতি আক্রমণ করে এবং বহু জমিদার ও মহাজনকে হত্যা করে।

[3] বিদ্রোহের অবসান: সাঁওতাল বিদ্রোহ দমনে বিশাল ব্রিটিশবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। সিধু, কানু-সহ বেশ কয়েকজন নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। প্রায় ২৩ হাজার বিদ্রোহীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বহু বিদ্রোহীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই নিষ্ঠুরতার ফলে ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্রোহ থেমে যায়।ব্রিটিশবাহিনী সাঁওতাল বন্দিদের নিয়ে যাচ্ছে

উপসংহার: ব্রিটিশ শাসনকালের প্রথম পর্বে আদিবাসী কৃষক আন্দোলনগুলির মধ্যে সাঁওতাল বিদ্রোহই সর্বপ্রথম ব্যাপক আকার ধারণ করে। পি. সি. যোশী বলেছেন যে, সাঁওতাল বিদ্রোহের একটি বিশেষ দিক ছিল স্বাধীনতার কামনা, সাঁওতাল অঞ্চল ও সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা।

ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment