ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন সভ্যতায় নাট্যশিল্প অর্থাৎ নাটকের প্রচলন ছিল। সুপ্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় প্রচলিত বিখ্যাত নাটকগুলি আজও বিভিন্ন দেশে মঞ্চস্থ হলে তা দর্শকদের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।
[ 1] ইউরোপে নাট্যচর্চা: প্রাচীনকালে ইউরোপে নাট্যচর্চার প্রচলন থাকলেও ইউরোপে আধুনিক নাট্যচর্চা শুরু হয় ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে এবং বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে। ইউরোপে শেকসপিয়ার, ক্রিস্টোফার মার্লো, বেন জনসন, জন গলসোর্দি, জর্জ বার্নার্ড শ প্রমুখের লেখা বিভিন্ন নাটক মঞ্চস্থ হলে সেগুলি প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করে।
[2] বাংলায় নাট্যচর্চা: অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে ভারতে বিশেষ করে বাংলায় আধুনিক নাট্যচর্চার প্রসার ঘটে। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে বাংলা নাট্যচর্চার সূচনা হয় এবং ঊনবিংশ শতকে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, শিশির ভাদুড়ী, শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত প্রমুখ বাংলা নাটকে অসামান্য অবদান রাখেন।
[3] মানুষের প্রতিচ্ছবি: বিভিন্ন দেশ বা সমাজে প্রচলিত নাটকগুলিতে সেখানকার সমকালীন ঘটনাবলি, শোষণ, অত্যাচার, বৈষম্য, সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি কাহিনি উঠে আসে। ফলে নাটক সেই সমাজের যথাযথ প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারে। আবার অনেক সময়ই নাটক লোকশিক্ষা ও জনমত গঠনে সহায়ক হয়ে ওঠে।
[4] গবেষক ও গবেষণা গ্রন্থ: সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন গবেষক যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নাটকের ইতিহাসচর্চা করছেন। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’, সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়ের ‘দৃশ্যকাব্য পরিচয়’, আশুতোষ ভট্টাচার্যের ‘বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাস’, সেলিম আল দীনের লেখা ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’, সাইমন জাকারিয়ার লেখা ‘বাংলাদেশের লোকনাটক: বিষয় ও আঙ্গিক-বৈচিত্র্য’, বালদুন ধিংরার ‘ন্যাশনাল থিয়েটার ফর ইন্ডিয়া’ প্রভৃতি নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
উপসংহার: সাম্প্রতিককালে নাটকের ইতিহাসচর্চা নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে। এর মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলি তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে।
ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর