কোল বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ভূমিকা: বিহারের ছোটোনাগপুর অঞ্চলে বসবাসকারী কোলরা নিজেদের প্রচলিত আইনকানুন ও বিচারপদ্ধতি অনুসারে সমাজ পরিচালনা করত ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছোটোনাগপুর অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণ করে।

[1] কোল বিদ্রোহের সূচনা: ব্রিটিশ কোম্পানি কোল-অধ্যুষিত অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সেই অঞ্চল বহিরাগত জমিদারদের ইজারা দেয়। এরপর থেকে কোলদের ওপর সরকার, জমিদার ও মহাজনদের তীব্র শোষণ শুরু হয়। এর প্রতিবাদে ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আদিবাসী কোলরা শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে যা ‘কোল বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।

[2] বিদ্রোহের কারণ: কোল বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল-[i] কোলদের ওপর রাজস্ব বৃদ্ধি, [ii] রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে কোলদের ওপর অত্যাচার, [iii] জমি থেকে কোলদের উৎখাত, [iv] কোলদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, [v] কোলদের বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা, [vi] কোলদের নিজস্ব আইন ও বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা প্রভৃতি।

[3] বিদ্রোহের প্রসার: কোল বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর তা দ্রুত সিংভূম, মানভূম, হাজারিবাগ ও পালামৌ জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন বুদ্ধু ভগত, জোয়া ভগত, সিংরাই, ঝিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডা প্রমুখ।

[4] বিদ্রোহের অবসান: বিদ্রোহীরা ইংরেজ কর্মচারী, জমিদার, জোতদার, মহাজন, ব্যবসায়ীদের আক্রমণ করে, তাদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং বহু লোককে হত্যা করে। শীঘ্রই ক্যাপটেন উইলকিনসনের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন চালায় এবং বহু আদিবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করলে বিদ্রোহ বন্ধ হয়ে যায়।

[5] ফলাফল: কোল বিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলি ছিল-[i] বিদ্রোহের ফলে কোল অধ্যুষিত অঞ্চলে সরকারি নীতির কিছু পরিবর্তন ঘটে। [ii] কোলদের জন্য ‘দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি’ নামে একটি পৃথক ভূখণ্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় (১৮৩৪ খ্রি.)। [iii] সেখানে ব্রিটিশ আইনকানুনের পরিবর্তে কোলদের নিজস্ব আইনকানুন চালু করা হয়। [iv] জমিদাররা যেসব জমি দখল করে নিয়েছিল তা কেড়ে নিয়ে কোলদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

উপসংহার: ব্রিটিশ শাসনকালে উপজাতি বিদ্রোহের ইতিহাসে কোল বিদ্রোহ ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ব্রিটিশ শাসকদের সাথে কোলদের এই অসম লড়াইয়ে কোলদের পরাজয় ছিল এই বিদ্রোহের দুঃখজনক পরিণতি।

ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment