কোল বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণগুলি উল্লেখ করো।

ভূমিকা: বর্তমান বিহারের ছোটোনাগপুর, সিংভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে বিটিশ শাসনকালে কোল উপজাতির মানুষ বসবাস করত। তাদের ওপর ব্রিটিশ সরকার, বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের তীব্র শোষণের ফলে তারা বিদ্রোহ শুরু করে যা ‘কোল বিদ্রোহ’ (১৮৩১-৩২ খ্রি.) নামে পরিচিত। কোল = বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল-

[ 1] রাজস্ব আদায়: আগে কোলরা রাজস্ব দিতে অভ্যস্ত ছিল না। কিন্তু ছোটোনাগপুর অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এখানে নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা চালু করে। বহিরাগত (দিকু) হিন্দু, মুসলিম ও শিখ মহাজনদের হাতে এখানকার জমির ইজারা দিয়ে তাদের হাতে রাজস্ব আদায়ের অধিকার তুলে দেওয়া হয়।

[2 ] রাজস্ব বৃদ্ধি: জমিদাররা দরিদ্র কোলদের ওপর রাজস্বের পরিমাণ অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয় এবং নতুন নতুন কর আরোপ করে। এই কর আদায় করতে গিয়ে তাদের ওপর চরম অত্যাচার চালানো হয়। কোলদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পানীয় মদের ওপর উচ্চহারে কর ধার্য করা হয়।

[3] জমি থেকে উৎখাত: ইজারাদাররা কোলদের সর্বস্ব কেড়ে নিতে থাকে, এমনকি জমি থেকেও তাদের উৎখাত করতে শুরু করে।

[4] নির্যাতন: কোলদের ওপর নানাভাবে নির্মম নির্যাতন চালানো হত। এক্ষেত্রে অনেকসময়ই কোল রমণীদের মর্যাদা নষ্ট করা হত এবং নানা অজুহাতে কোল পুরুষদের বন্দি করে রাখা হত।

[5] অর্থনৈতিক শোষণ: রাস্তা তৈরির জন্য বিনা পারিশ্রমিকে কোলদের বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করা হত। কোলদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ** তাদের খাদ্যশস্যের পরিবর্তে আফিম চাষে বাধ্য করা হত।

[ 6] কোল ঐতিহ্য ধ্বংস: কোলদের নিজস্ব আইনকানুন, বিচারপদ্ধতি প্রভৃতি ধ্বংস করে তাদের ওপর জোর করে ব্রিটিশদের আইনকানুন ও বিচারপদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া হত। তাই কোলরা ক্ষুব্ধ হয়েই বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।

উপসংহার: এইসব শোষণ, নির্যাতন ও উৎপীড়নের অবসান ঘটাতে বুন্ধু ভগত, জোয়া ভগত, সুই মুন্ডা প্রমুখের নেতৃত্বে আদিবাসী কোলরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এদের সঙ্গে মুন্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি উপজাতি যোগ দিলে বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে।

ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment