‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় বাংলার সমকালীন সমাজের প্রতিফলন
ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলা থেকে প্রকাশিত যেসব পত্রপত্রিকায় সমকালীন সমাজের প্রতিফলন ঘটেছে, সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা। সমকালীন বঙ্গসমাজের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র এই পত্রিকায় ফুটে ওঠে। যেমন-
[ 1] দরিদ্র মানুষের দুর্দশা: ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বাংলার তৎকালীন সমাজের দরিদ্র কৃষক-মজুরদের দুর্দশা-দুরবস্থায় মর্মাহত ছিলেন। দরিদ্রদের দুরবস্থার নানা ঘটনার চিত্র তিনি তাঁর পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশ করতেন।
[2] শোষণ অত্যাচার: তৎকালীন বাংলার প্রজারা সর্বদা কীভাবে ব্রিটিশ সরকার, সরকারের পুলিশ, জমিদার ও মহাজনদের শোষণ ও অত্যাচারের শিকার হয়, তা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া সাঁওতাল পরগনার আদিবাসীরা কীরূপ অত্যাচারের শিকার হয়, সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় সরকারি সেনা কীরূপ নৃশংসভাবে অগণিত সাঁওতালদের হত্যা করে, বিদেশি নীলকর সাহেবরা কীভাবে বাংলার চাষিদের নীলচাষে বাধ্য করত, তারা চাষিদের ওপর কীরূপ নির্মম অত্যাচার চালাত, তার বিবরণও ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত।
[3] অর্থনৈতিক দুর্দশা: ব্রিটিশ সরকার বাংলার চাল-ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানি করে বিনিময়ে মদ আমদানি করত। এর ফলে বাংলার অর্থনৈতিক দুর্দশা ও সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ার নানা খবর ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত হত।
[ 4] নারীর অবস্থা: সমাজে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা ধারাবাহিক প্রচার চালায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহের প্রবর্তন করলে হরিশচন্দ্র তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে বিধবাবিবাহের সমর্থনে জনমত গড়ে তোলেন। নারীশিক্ষাকে সমর্থন করে এই পত্রিকায় নারীশিক্ষার সপক্ষে ব্যাপক প্রচার চালায়।
[5] সামাজিক কুসংস্কার: মেয়েদের বাল্যবিবাহ, পুরুষদের বহুবিবাহ, মদ্যপান প্রভৃতি সামাজিক কু-প্রথার বিরুদ্ধে নানা সংবাদ ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হত।
উপসংহার: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা উনিশ শতকের আর্থ-সামাজিক জীবনের মুখপত্র হয়ে ওঠে। অত্যাচারী নীলকর, জমিদার প্রমুখের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই পত্রিকা সরব প্রতিবাদ জানায়।
ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর