হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
ভূমিকা: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮২৪-১৮৬১ খ্রি.) ছিলেন উনিশ শতকে বাংলার এক নির্ভীক দেশপ্রেমিক, সাংবাদিক এবং সমাজসেবক। ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে নীলচাষিদের দুর্দশার বিবরণ তিনি সকলের সামনে তুলে ধরেন।
[1] প্রথম জীবন: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে ভবানীপুরের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল রামধন মুখোপাধ্যায়। ভবানীপুরের পাঠশালায় পড়ার সময়ই তিনি অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দেন। অত্যন্ত দারিদ্র্যের শিকার হয়ে হরিশচন্দ্র স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন।
[2 ] পত্রিকার সম্পাদনা: মধুসূদন রায়ের কাছ থেকে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা ও প্রেসের মালিকানা স্বত্ব কিনে নেন। তাঁর সম্পাদনায় এই পত্রিকার উৎকর্ষ ও জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই পত্রিকায় বাংলার নীলচাষিদের ওপর সীমাহীন অত্যাচারের বিবরণ নিয়মিত প্রকাশ করা হত। ফলে কলকাতার শিক্ষিত সমাজ এ বিষয়ে জানতে পারে এবং প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে।
[3] নীলচাষিদের সহায়তা: বাংলার অত্যাচারিত নীলচাষিদের দুর্দশা মোচনের জন্য হরিশচন্দ্র প্রচুর পরিশ্রম করতেন। চাষিদের আর্থিক সহায়তা, আইনি পরামর্শ প্রভৃতি দানের উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়ির দরজা সর্বদা চাষিদের জন্য খোলা ছিল।
[4] অন্যান্য উদ্যোগ: হরিশচন্দ্র ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, চিনি, তৈলবীজ প্রভৃতি রপ্তানি ও মদ আমদানির বিরোধিতা করেন। তিনি ডালহৌসির (১৮৪৮-৫৬ খ্রি.) নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন। কিন্তু অন্যদিকে তিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহে ব্রিটিশদের সমর্থন করেন।
[5] মৃত্যু: সীমাহীন পরিশ্রমের ফলে হরিশচন্দ্রের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। কিছুকাল পর তাঁর যক্ষ্মারোগ ধরা পড়ে। অবশেষে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে (১৪ জুন) মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় দেশকল্যাণের কাজে তাঁর ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকাকেই হাতিয়ার করে তুলেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর প্রাকমুহূর্তেও জ্বরের ঘোরে তাঁর দায়িত্বপূর্ণ উক্তি ছিল- “ওরে, পেট্রিয়ট মেশিনে ওঠাসনে, প্রুফটা আর-একবার আমাকে দিয়ে দেখিয়ে তবে ছাপিস।”
ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর