দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-৯৯ খ্রি.) বিবরণ দাও।

ভূমিকা: ভারতের আদিবাসী চুয়াড় বা চোয়াড় জনগোষ্ঠী বাংলার মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিমাংশ ও বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে বসবাস করত। চুয়াড়রা কৃষিকাজ ও পশুশিকারের পাশাপাশি স্থানীয় জমিদারদের অধীনে পাইক বা সৈনিকের কাজ করত।

[1] দ্বিতীয় পর্বের বিদ্রোহের সূচনা: ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ চুয়াড়দের নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে পরবর্তীকালে ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু হয়।

[2] বিদ্রোহের কারণ: দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-৯৯ খ্রি.) বিভিন্ন কারণ ছিল-[i] ব্রিটিশ সরকার ও তাদের কর্মচারীরা আদিবাসী চুয়াড় এবং স্থানীয় জমিদারদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। [ii] ইংরেজরা দরিদ্র চুয়াড়দের জমির মালিকানা বাতিল করে তাদের জমি থেকে উৎখাত করে। [iii] সরকার বহু চুয়াড়কে তাদের পাইকের পেশা থেকে বরখাস্ত করে। [iv] জমিদারদের ওপর রাজস্বের পরিমাণ যথেষ্ট বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব কারণে জমিদার ও চুয়াড় কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়।

[ 3] বিদ্রোহের প্রসার: জঙ্গলমহল-সহ মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চুয়াড় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহে নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন বাঁকুড়ার রায়পুরের জমিদার দুর্জন সিং, মেদিনীপুরের রানি শিরোমণি প্রমুখ। তাঁরা বিভিন্ন জমিদার ও আদিবাসী চুয়াড়দের বিদ্রোহে শামিল করতে সক্ষম হন। দুর্জন সিং প্রায় ১৫০০ জন অনুগামী নিয়ে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং প্রায় ৩০টি গ্রামে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেন। বিদ্রোহীরা সরকারি দপ্তরেও আক্রমণ চালায়।

[ 4] বিদ্রোহের অবসান: বিদ্রোহীদের চাপে ইংরেজ পুলিশ ও কর্মচারীরা বিদ্রোহের মূল কেন্দ্র রায়পুর ছেড়ে পালিয়ে গেলেও শীঘ্রই সশস্ত্র ব্রিটিশ সেনা এসে বিদ্রোহী জমিদার ও আদিবাসী চুয়াড়দের পরাজিত করে। রানি শিরোমণিকে হত্যা এবং দুর্জন সিংকে গ্রেফতার করা হয়। এর ফলে বিদ্রোহ থেমে যায়।

উপসংহার: এই বিদ্রোহের পর চুয়াড়দের কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার চুয়াড়-অধ্যুষিত এলাকায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। বিষুপুর শহরটিকে কেন্দ্র করে দুর্গম বনাঞ্চল নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘জঙ্গলমহল’ নামে একটি বিশেষ জেলা (১৮০০ খ্রি.)।

ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment