চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফলগুলি বিশ্লেষণ করো।

অথবা, চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব বিবৃত করো।

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্নে বর্তমান মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিমাংশ ও বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে চুয়াড় বা চোয়াড় নামে একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করত। ব্রিটিশ কোম্পানির শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বিদ্রোহে শামিল হয়। এই বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফলগুলি ছিল নিম্নরূপ-

[1] দমনপীড়ন: চুয়াড় বিদ্রোহ দমনের জন্য ইংরেজ পুলিশবাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন চালায়। তারা রানি শিরোমণিকে হত্যা করে এবং দুর্জন সিংকে গ্রেফতার করে।

[2] বিদ্রোহের পথপ্রদর্শক: ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে পশ্চাৎপদ চুয়াড়রা বিদ্রোহ শুরু করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে। কেন-না, নিরক্ষর চুয়াড়রা অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ শুরু করেছিল তা ভারতের শিক্ষিত সম্প্রদায় শুরু করে আরও অন্তত এক শতাব্দী পরে।

[3 ] জমিদার ও কৃষকদের ঐক্য: চুয়াড় বিদ্রোহ জমিদারদের বিরুদ্ধে নয়, অত্যাচারী ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। জমিদার ও চুয়াড় কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহে শামিল হয়।

[ 4] জঙ্গলমহল গঠন: চুয়াড়দের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সরকার এখানকার শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটায়। বিষ্ণুপুর শহরটিকে কেন্দ্র করে দুর্গম বনাঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল নামে একটি পৃথক জেলা গঠন করা হয়।

উপসংহার: চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষকবিদ্রোহ। সেদিনের দুর্গম ‘জঙ্গলমহল’ অর্থাৎ আজকের বাঁকুড়ার একাংশের কৃষক-সম্প্রদায় আজও চুয়াড় বিদ্রোহের স্মরণে গর্ববোধ করেন।

ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment