উত্তর – ভিল বিদ্রোহ
ভূমিকা: ভিল সম্প্রদায় হল ভারতের প্রাচীন আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি শাখা। খান্দেশ অঞ্চল-সহ পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন স্থানে তারা বসবাস করত। তারা ছিল সৎ, স্বাধীন, স্বনির্ভর জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ভিলরা এক শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে।
[1] বিদ্রোহের কারণ: ভিল বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল-
[i] ইংরেজরা ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ভিলদের বসতি অঞ্চল খান্দেশ দখল করলে তারা ক্ষুদ্ধ হয়। [ii] ভিলদের ওপর উচ্চহারে ভূমিরাজস্ব চাপানো হয় এবং তা আদায় করতে গিয়ে তাদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার চালানো হয়। [iii] ভিলদের বসতি অঞ্চলে ব্রিটিশ আইন ও
বিচারব্যবস্থার প্রবর্তন ভিলরা মেনে নিতে পারেনি। [iv] মাড়োয়ারি সাউকার ও মহাজনরা সুকৌশলে ভিলদের ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলে। সেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের ওপর নিদারুণ অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হত।
[2 ] বিদ্রোহের সূচনা: ভিলদের ওপর নানা ধরনের শোষণ ও অত্যাচারের ফলে তারা ব্রিটিশ কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহীদের অন্যতম প্রেরণা ছিলেন মহারাষ্ট্রের নেতা ত্রিম্বকজি। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিদ্রোহীদের নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন সেওয়ারাম।
[3] ব্যর্থতা: কর্নেল আউট্রামের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ভিল বিদ্রোহীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন চালালে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের ভিল বিদ্রোহ থেমে যায়।
[4] গুরুত্ব: ভিল বিদ্রোহের ফলে-[i] বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ভিলরা ঐক্যবদ্ধ হয়। [ii] মাড়োয়ারি মহাজন শ্রেণি গুজরাট ও রাজস্থান অঞ্চল থেকে পালিয়ে যায়।
উপসংহার: তীব্র দমনপীড়ন সত্ত্বেও ভিলদের বিদ্রোহের আগুন কখনোই একেবারে নিভে যায়নি। তাই ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে আপাতদৃষ্টিতে বিদ্রোহ থেমে গেলেও পরবর্তীকালে ১৮২৫, ১৮৩৬ এবং ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভিল জাতি বারবার বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল।
ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর