নারীসমাজের উন্নতির লক্ষ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ কীরূপ উদ্যোগ নিয়েছিল?

ভূমিকা: ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেনের অনুগামী উমেশচন্দ্র দত্ত ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকার প্রকাশ শুরু করেন। বাংলার নারীসমাজের উন্নতির লক্ষ্যে এই পত্রিকা বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। যেমন-

[1] সামাজিক সংস্কার: উনিশ শতকে এদেশের হিন্দুসমাজে মেয়েরা বাল্যবিবাহ, পণপ্রথা প্রভৃতির শিকার ছিল। এসব সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে এবং নারীদের মন থেকে যাবতীয় কুসংস্কার ও সন্দেহ দূর করার উদ্দেশ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নিয়মিত প্রচার চালিয়ে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালায়।

[2] শিক্ষার প্রসার: উনিশ শতকেও সাধারণ মানুষ নারীশিক্ষাকে বিশেষ সমর্থন করত না। এই অবস্থায় ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নারীশিক্ষার সমর্থনে, নারী সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিয়মিত প্রচার চালায়।

[ 3] নারী-অধিকার প্রতিষ্ঠা: উনিশ শতকেও নারীরা মূলত বাড়ির অন্দরমহলে আবদ্ধ ছিল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের কোনো সুযোগ ছিল না। ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নারীদের সামাজিক অধিকার ও মর্যাদা প্রদানের লক্ষ্যে নিয়মিত প্রচার চালায়। নারী-অধিকারের উদার সমর্থকদের নিয়ে এই পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলী গড়ে তোলা হয়।

[ 4] প্রগতিশীলতার প্রয়াস: নারীরা যাতে নিজস্ব লেখনীর মাধ্যমে নিজেদের মতামত জানাতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ গোষ্ঠী স্বনামে বা বেনামে নারীদের এই পত্রিকায় নিয়মিত লেখার সুযোগ করে দেয়। পত্রিকাগোষ্ঠী নারীজাতির স্বার্থরক্ষা ও সামাজিক অগ্রগতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বইপত্র ও পত্রিকা প্রকাশ করে।

উপসংহার: নারীসমাজের উন্নতির লক্ষ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল তাতে শুধু যে নারীদের উন্নতি হয়েছিল তাই নয়, এর ফলে – গোটা সমাজেরই অগ্রগতি হয়েছিল।

ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment