উত্তর – ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের সামাজিক কারণ
ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসন ভারতীয় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মনে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি করলে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। এই বিদ্রোহের সামাজিক কারণগুলি ছিল নিম্নরূপ-
[ 1] শাসক-শাসিত সম্পর্ক: ঔপনিবেশিক ভারতে ইংরেজ শাসক ও শাসিতের মধ্যে ব্যবধান ও বৈষম্য ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং ভারতীয়রা নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে পড়ে।
[2] ভারতীয়দের প্রতি ঘৃণা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত সর্বত্র ইংরেজরা ভারতীয়দের ঘৃণার চোখে দেখত। বহু ইউরোপীয় ক্লাবের দরজায় লেখা থাকত, “কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ।” ওয়ারেন হেস্টিংস বলেছেন, “কয়েক বছর আগে পর্যন্ত অধিকাংশ ইংরেজ ভারতীয়দের প্রায় বর্বর মনে করত।”
[ 3] ভারতীয়দের রক্ষণশীল মনোভাব: ভারতীয়রা এদেশে বিদেশি শ্বেতাঙ্গ শাসন কখনোই মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। মুঘল শাসনের পতন ঘটানোর জন্য মুসলিমরা ব্রিটিশদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুদ্ধ ছিল। আবার সতীদাহপ্রথা নিষিদ্ধ করা, বিধবাবিবাহের প্রচলন প্রভৃতির জন্যও রক্ষণশীল হিন্দুরা ব্রিটিশদের ওপর যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ছিল।
[4] ব্রিটিশ কর্মচারীদের অত্যাচার: ব্রিটিশ প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের অত্যাচার ও ব্যভিচার ভারতীয়দের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। কোল, ভিল, সাঁওতাল, মুন্ডা প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়গুলিও চরম অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকার হত। এই কারণে ভারতবাসী ব্রিটিশদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিল।
উপসংহার: ভারতবাসীর প্রতি তীব্র অত্যাচার, ঘৃণা, অবমাননা, লাঞ্ছনা প্রভৃতির মাধ্যমে ব্রিটিশরা ভারতীয় সমাজকে বারুদের স্তূপে পরিণত করে।
ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর