সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তর – সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র

ভূমিকা: ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল দরিদ্র সাঁওতালদের আপসহীন এক সংগ্রাম। তবে এই বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র নিয়ে বিতর্ক আছে। যেমন-

[1] আদিবাসী বিদ্রোহ: সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল বিহারের ছোটোনাগপুর অঞ্চলের আদিবাসী বা উপজাতি সাঁওতালদের বিদ্রোহ। আদিবাসী সাঁওতালরাই ছিল এই বিদ্রোহের প্রাণশক্তি।

[2] কৃষকবিদ্রোহ: সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল মূলত একটি কৃষকবিদ্রোহ। দরিদ্র ও শোষিত আদিবাসী সাঁওতাল কৃষকরা জমিদার, মহাজন ও ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহে অংশ  নিয়েছিল 

[3 ] ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহ: সাঁওতাল বিদ্রোহ শুধু জমিদার বা মহাজন-বিরোধী বিদ্রোহ ছিল না। এই বিদ্রোহ ছিল স্পষ্টতই ব্রিটিশ-বিরোধী। বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হ্যালিডে বলেন যে, ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোই এই বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল।

[4] গণবিদ্রোহ: সাঁওতাল কৃষকদের উদ্যোগে এই বিদ্রোহ শুরু হলেও স্থানীয় কামার, কুমোর, তেলী, গোয়ালা, মুসলিম তাঁতি, চামার, ডোম প্রভৃতি সম্প্রদায় ও পেশার মানুষও এই বিদ্রোহে শামিল হয়। তাই নরহরি কবিরাজ একে সকল সম্প্রদায়ের দরিদ্র জনগণের মুক্তিযুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন।

[5] ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্রোহ: কেউ কেউ সাঁওতাল বিদ্রোহে ধর্মের প্রভাব দেখতে পেলেও এই বিদ্রোহ প্রকৃতপক্ষে ধর্মকেন্দ্রিক ছিল না। বিদ্রোহী সাঁওতালরা ঈশ্বরকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। বরং তারা চিৎকার করে বলত- “ঈশ্বর মহান, কিন্তু তিনি থাকেন বহু বহু দূরে। আমাদের বাঁচাবার কেউ নেই।’

উপসংহার: বিতর্ক থাকলেও এ কথা সত্য যে, বহুমুখী অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাঁওতাল উপজাতির এই বিদ্রোহ এক আপসহীন সংগ্রামের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছিল।

ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment