‘রংপুর বিদ্রোহ’ সম্পর্কে কী জান?

ভূমিকা: দেবী সিংহ নামে জনৈক ব্যক্তি ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে সরকারের কাছ থেকে দিনাজপুর, রংপুর ও এদ্রাকপুর পরগনা ইজারা নেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেবী সিংহের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে যে কৃষকবিদ্রোহ শুরু হয় তা ‘রংপুর বিদ্রোহ’ (১৭৮৩ খ্রি.) নামে পরিচিত।

[1] বিদ্রোহের কারণ: রংপুর বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার বিভিন্ন কারণ ছিল-[i] দেবী সিংহ দিনাজপুর, রংপুর ও এদ্রাকপুর পরগনার ইজারা নিয়ে সেখানকার জমিদার ও প্রজাদের ওপর রাজস্বের হার বহুগুণ বৃদ্ধি করেন এবং নানা নতুন কর আরোপ করেন। [ii] রাজস্ব আদায়ে এখানকার জমিদার ও কৃষকদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু হয়। রংপুর পরগনায় এই অত্যাচার চরমে ওঠে। কৃষকদের কারাগারে অনাহারে বন্দি রাখা, বেত্রাঘাত প্রভৃতি চলতে থাকে। [iii] কৃষকরা গোরুবাছুর, সম্পত্তি, এমনকি নিজ সন্তানদের বিক্রি করেও দেবী সিংহের শোষণ থেকে মুক্ত হতে পারত না।

[2] বিদ্রোহের সূত্রপাত: দেবী সিংহের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরের কাজীর হাট, কাকিনা, ফতেপুর, ডিমলা প্রভৃতি স্থানের কৃষকরা ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি তেপা গ্রামে মিলিত হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এটি ‘রংপুর বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।

[3] স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা: বিদ্রোহীরা একটি ‘স্থানীয় স্বাধীন সরকার’ গঠন করে। এই সরকারের নবাব বা নেতা হন নুরুলউদ্দিন এবং তাঁর সহকারী নেতা হন দয়ারাম শীল।

[4] বিদ্রোহের প্রসার: বিদ্রোহীরা দেবী সিংহকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে এবং তার রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের বিতাড়িত করে। বহু কর্মচারী নিহত হয়। বিদ্রোহের ব্যয় নির্বাহের জন্য ‘ডিং খরচা’ নামে চাঁদা ধার্য করা হয়।

[5] বিদ্রোহ দমন: রংপুরের কালেক্টর গুডল্যান্ড বিদ্রোহ দমনে সুবিশাল ব্রিটিশবাহিনী পাঠান। মোগলহাট ও পাটগ্রামের যুদ্ধে বিদ্রোহীরা সেনাপতি ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশবাহিনীর কাছে পরাজিত হলে বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে। ব্রিটিশবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, অসংখ্য বিদ্রোহীকে হত্যা করে।

উপসংহার: রংপুর বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসনকালের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। জমিদার ও কৃষকদের মিলিত এই বিদ্রোহ যতটা দেবী সিংহের বিরুদ্ধে ছিল, ঠিক ততটাই ছিল ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনাস্থার প্রকাশ।

ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment