সামরিক ইতিহাস ও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সভ্যতা, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক উপাদান ছিল সামরিক শক্তি। যুদ্ধের জন্য সামরিক শক্তি অপরিহার্য ছিল।

[1] ধারাবাহিক পরিবর্তন: প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিটি দেশ, জাতি ও সভ্যতায় সামরিক কাঠামো, যুদ্ধাস্ত্র প্রভৃতির ধারাবাহিক পরিবর্তন ঘটেছে। সামরিকবাহিনীতে পদাতিক, রথ বা হস্তিবাহিনীর পরিবর্তে বর্তমানে ট্যাংক বা সাঁজোয়াবাহিনী, বিমানবাহিনী প্রভৃতি এবং তিরধনুক, তরবারি প্রভৃতির পরিবর্তে কামান, বন্দুক, বোমা, বিষাক্ত গ্যাস প্রভৃতির প্রচলন ঘটেছে।

[2] সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রসার: উনবিংশ শতক পর্যন্ত যুদ্ধ-সংক্রান্ত আলোচনা যুদ্ধের কারণ ও ফলাফলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানকালে এই ধারার পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে যুদ্ধাস্ত্র, সামরিক সজ্জা, রণকৌশল, সামরিক পোশাক প্রভৃতি খুঁটিনাটি বিষয়ও ইতিহাসচর্চার মধ্যে প্রবেশ করেছে।

[3] ইউরোপে সামরিক ইতিহাসচর্চা: বিংশ শতকে ইউরোপে সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রসার ঘটে। বার্নেট, কোরেলি, শেলফোর্ড বিডওয়েল, জন টেরাইন প্রমুখ প্রাচীন ও আধুনিক যুদ্ধবিদ্যার তুলনা-মূলক গবেষণা করেছেন। রজার স্পিলার, জন হোয়াইট ক্লে প্রমুখ যুদ্ধ ও যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত নানা কিংবদন্তিদের নিয়ে গবেষণা করেছেন।

[4] ভারতে সামরিক ইতিহাসচর্চা: ভারতে বিগত শতকে সামরিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয়। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন। এ ছাড়া রবার্ট আর্ম, সুবোধ ঘোষ, দীপ্তনীল রায়, নিখিলেশ ভট্টাচার্য প্রমুখ এবিষয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিককালের সামরিক ইতিহাসচর্চায় কৌশিক রায় একটি অগ্রগণ্য নাম।

উপসংহার: রাষ্ট্র তার সামরিক শক্তির দ্বারা যুদ্ধবিগ্রহ, সাম্রাজ্যবিস্তার প্রভৃতির মাধ্যমে ইতিহাসের ঘটনাবলিকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। তাই নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় সামরিক ইতিহাসচর্চা আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment