শহরের ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: কোনো ক্ষুদ্র ও জনবিরল গ্রাম সময়ের ধারা বেয়ে কোনো একসময়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরে পরিণত হয়ে ওঠে। তাই গ্রাম থেকে শহরের উদ্ভব, বিকাশ ও বিবর্তনের একটি ইতিহাস থাকে।
[ 1] শহরের ইতিহাসের গুরুত্ব: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার মতো শহরের ইতিহাসচর্চাও অনেকটাই ক্ষুদ্র অঞ্চল নিয়ে হয়ে থাকে। কিন্তু শহরগুলি কোনো বৃহৎ ভূখণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হয় ওঠায় দেশ বা জাতির ইতিহাসে শহরের ইতিহাসচর্চার বিশেষ গুরুত্ব থাকে। যেমন-বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসচর্চায় কলকাতা শহরের উদ্ভব ও বিকাশের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
[2 ] শহরের ইতিহাসের বিষয়: শহরের ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল শহরের আর্থসামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক চর্চা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্থাপত্য-ভাস্কর্যের উন্নতি, শিল্প-সংস্কৃতির ধারা, ধর্মের প্রভাব, নগরায়ণ প্রক্রিয়া প্রভৃতি।
[ 3] ইউরোপে শহরের ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে শহরের ইতিহাসচর্চার প্রচলন থাকলেও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চায় গতি আসে ১৯৭০-এর দশকে। এই সময়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন থার্নস্টর্মের নেতৃত্বে শহরের ইতিহাসচর্চার ধারাটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে এডুইন বরোজ, মাইক ওয়ালেস, এস জি বেকল্যান্ড, রোনাল্ড টেলর প্রমুখ এই ধারাকে সমৃদ্ধ করেন।
[ 4] ভারতে শহরের ইতিহাসচর্চা: ভারতীয় গবেষকদের মধে নারায়ণী গুপ্তা দিল্লি নিয়ে, রীনা ওল্ডেনবার্গ লখনউ দিয়ে, ক্রিস্টিন ডবিন মুম্বই নিয়ে, যতীন্দ্রমোহন রায় ঢাকা নিয়ে, রাধারমণ মিত্র কলকাতা নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন।
শহরের ইতিহাসচর্চ নিয়ে বাংলায় যাঁরা গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে রাধারমণ মিত্র, ড. সৌমিত্র শ্রীমানী, বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মুনতাসীর মামুন, যতীন্দ্রমোহন রায় ও শামসুদ্দোহা চৌধুরী উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার: শহরের ইতিহাসচর্চা আজ সামগ্রিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মূলত শহরের প্রকৃতি আলোচনাই এই ইতিহাসচর্চার মূল বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর