দৃশ্যশিল্পের শাখা হিসেবে নৃত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: মানবসমাজে শিল্পচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারা হল নৃত্যকলা। সুপ্রাচীনকাল থেকে নৃত্যকলা বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান হিসেবে চলে আসছে।
[1] ধর্মীয় ক্ষেত্রে নৃত্যকলা: প্রাচীন ভারতে ধর্মীয় ক্ষেত্রে নৃত্যকলার প্রচলন থাকলেও এই নৃত্যকলার সঙ্গে একমাত্র সমাজের উচ্চবর্গের যোগ ছিল, সাধারণ মানুষের কোনো যোগ ছিল না।
বিভিন্ন মন্দিরে দেবদাসীদের নৃত্য ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্গীয় মানুষের উপভোগের বিষয় ছিল। প্রচার করা হত, এই রীতি ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপেরই অঙ্গ। নৃত্যকলা থেকে সে যুগের সামাজিক বৈষম্যের পরিচয়ও পাওয়া যায়।
[2] বিবর্তন: যুগে যুগে নৃত্যকলার বিবর্তন ঘটেছে। প্রাচীনকালের ধর্মীয় বন্ধন থেকে নৃত্যকলা মুক্তিলাভ করে পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পদ হয়ে উঠেছে। উচ্চবর্গের নৃত্যের পাশাপাশি আদিবাসী-সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের নৃত্যও সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
[3] বৈচিত্র্য: আধুনিককালে প্রতিটি সমাজের নৃত্যকলাতেই নানা বৈচিত্র্য এসেছে। কথক, ভরতনাট্যম, ছৌ, কুচিপুরী, কথাকলি, গৌড়ীয় নৃত্য প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের নৃত্যের সমন্বয়ে ভারতের নৃত্যকলার ভান্ডার বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উদয়শঙ্কর, অমলাশঙ্কর, রুক্মিনী দেবী, মল্লিকা সারাভাই, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, অনিতা রত্নম-সহ বিভিন্ন নৃত্যশিল্পী এই বৈচিত্র্য বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন।
[4] গবেষক ও গবেষণা গ্রন্থ: বিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে নৃত্যকলার ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল জে অ্যাডশিড ল্যান্সডেল সম্পাদিত ‘ড্যান্স হিস্ট্রি: অ্যান ইনট্রোডাকশন’, ওয়াং কেফেনের ‘দ্য হিস্ট্রি অব চাইনিজ ড্যান্স’, রাগিনী দেবীর ‘ড্যান্স ডায়ালেক্ট অব ইন্ডিয়া’, আকৃতি সিনহার ‘লেট’স নো ড্যান্সেস অব ইন্ডিয়া’, শোভনা গুপ্তার ‘ড্যান্স অব ইন্ডিয়া’, গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভারতের নৃত্যকলা’ প্রভৃতি।
উপসংহার: মানব-ইতিহাসে সংস্কৃতির বিবর্তন ও বৈচিত্র্যকে তুলে ধরার কাজে নৃত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা আজ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর দ্বারা সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি জানা সম্ভব হচ্ছে।
ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর