খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা
ভূমিকা: সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ধারাবাহিক বিবর্তন ও পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এই বিবর্তন ও পরিবর্তনে কোনো বিশেষ সভ্যতা বা সংস্কৃতির বিশেষ প্রভাব থাকে।
[1] সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা: কোনো মানবসমাজ ও সভ্যতার খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন সেই সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনের পরিচায়ক। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন থেকে সেই সমাজ সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।
[2] প্রাচীন বাংলার দৃষ্টান্ত: প্রাচীনকালে বিভিন্ন সময়ে বাংলায় আমিষ আহার বিশেষ জনপ্রিয় হলেও পালযুগে বৌদ্ধধর্ম এবং সেনযুগে ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রভাবে বাংলায় ভাত ও নিরামিষ খাবারের প্রচলন বাড়ে। খাদ্যাভ্যাসের এই পরিবর্তন থেকে সেযুগে ধর্মীয় প্রাধান্যের আভাস পাওয়া যায়।
[3] সুলতানি আমলে বাংলার দৃষ্টান্ত: সুলতানি আমলে বাংলায় ইসলামি সংস্কৃতির প্রসার এখানকার খাদ্যাভাসে প্রভাব ফেলে। অধ্যাপক শরিফউদ্দিন আহমেদ দেখিয়েছেন যে, একসময় ঢাকা প্রাদেশিক মুসলিম শাসকদের রাজধানী হলে এখানকার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে। তখন থেকে ঢাকার রন্ধনপ্রণালীতে পারসিক খাদ্যরীতির প্রবেশ ঘটে এবং ‘ঢাকাই খাবার’-এর উদ্ভব হয়।
[4] ঔপনিবেশিক আমল: ঔপনিবেশিক শাসনও এদেশের খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ প্রভাব ফেলে। পোর্তুগিজদের প্রভাবে হুগলি জেলায় মিষ্টি তৈরিতে ছানার ব্যবহার শুরু হয়। এভাবে খাদ্যাভ্যাস কোনো জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনকেও প্রভাবিত করে।
[5] উল্লেখযোগ্য গবেষকগণ: সম্প্রতি খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা’ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষকরা হলেন ড. কে টি আচয়, হারভে লেভেনস্টেইন, জোনাথন রাইট, রিয়াই টান্নাহিল, বিজয়া চৌধুরী, হরিপদ ভৌমিক প্রমুখ।
উপসংহার: খাদ্যাভ্যাসের মধ্য দিয়ে মানুষের সংস্কৃতি, রুচি, এমনকি অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিচয় মেলে।
ক্লিক করুন দশম শ্রেণির ইতিহাস এর সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর