সাম্প্রতিককালে ইতিহাসের আলোচনার বিষয়বস্তু নানা শাখায় প্রসারিত হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করো।

সাম্প্রতিককালে ইতিহাসের আলোচনার বিষয়বস্তু ভূমিকা: একদা ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে মূলত রাজা-মহারাজদের কাহিনি, রাজবংশের উত্থান-পতন, সেনাপতি বা দিগ্‌বিজয়ী বীরদের সাফল্য-ব্যর্থতার কাহিনি, সমাজের উচ্চবর্গের জীবনচর্চা প্রভৃতি আলোচনাই গুরুত্ব পেত । কিন্তু সাম্প্রতিককালে বহু নতুন বিষয় ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইতিহাসচর্চা বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেমন—

[1] রাজাদের কার্যকলাপ: বিগত শতাব্দীর মতো বর্তমানকালেও যুদ্ধবিগ্রহ, রাজ্যজয়, শান্তিপ্রতিষ্ঠা, সন্ধি, রাজবংশের উত্থান-পতন প্রভৃতি বিষয়ের ইতিহাসচর্চা অব্যাহত আছে।

[2] উচ্চবর্গের আলোচনা: বিগত শতকের মতো সাম্প্রতিককালেও অভিজাত, ভূস্বামী, জমিদার, সামন্তপ্রভু প্রভৃতি সমাজের উচ্চবর্গের আলোচনা ইতিহাসচর্চার অন্যতম বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

[3] সাধারণ মানুষের আলোচনা: বিগত শতক পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, শিল্প-সংস্কৃতি, খেলাধুলা, পরিবেশ প্রভৃতি বিষয়ের ইতিহাসচর্চা অনেকটা উপেক্ষিত থাকলেও সাম্প্রতিককালে এসব বিষয়ের চর্চা ও গুরুত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

[4] স্থানীয় ইতিহাস : সাম্প্রতিককালে আঞ্চলিক ও স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে চর্চাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মহাদেশ থেকে দেশ, দেশ থেকে স্থানীয় অঞ্চলের শহর ও গ্রাম, শহর ও গ্রাম থেকে ব্যক্তি, মানুষ প্রভৃতি সবকিছুই ইতিহাসের আলোচনায় স্থান পাচ্ছে।

[5] বিজ্ঞানের ইতিহাস: প্রাচীনকাল থেকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার যে ধারাবাহিক অগ্রগতি ঘটেছে সে বিষয়ের ইতিহাসচর্চাও সাম্প্রতিককালে বৃদ্ধি পেয়েছে।

[6] নারী ইতিহাস: একদা ইতিহাসচর্চায় নারীরা যথেষ্ট উপেক্ষিত থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন ইতিহাসবিদ নারী ইতিহাসচর্চায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন।
উপসংহার: সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে ইতিহাসচর্চার ধারারও পরিবর্তন ঘটে চলেছে। সংযোজিত হচ্ছে নতুন নতুন বিষয়। ফলে আধুনিক কালের ইতিহাসচর্চা আরও বেশি বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

Leave a Comment