‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

উত্তর – ‘নামকরণ’ অংশ দ্রষ্টব্য।

ছোটোগল্পের বিশেষ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল— এক,
ছোটোগল্প আকৃতিতে ছোটো হবে। ছোটো অবয়বের মধ্যে কাহিনি গড়ে উঠবে। তাই বলা যায় – A short story is a story that can be finished in a single sitting. দুই, ছোটোগল্পে ঘটনার গতির একমুখিতা থাকবে। তিন, চরিত্র থাকবে সংখ্যায় কম। চার, কোনো তত্ত্ব ও উপদেশ থাকবে না।

পাঁচ, থাকবে আরম্ভের তির্যকতা ও সমাপ্তির চমৎকারিত্ব। ছয়, সর্বোপরি পাঠকমন এক অতৃপ্তিতে পূর্ণ থাকবে, যাকে বলা হয় ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’। এককথায় জীবনের সারাংশের মধ্যে সামগ্রিকতার প্রকাশ, অর্থাৎ ‘বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন’ কিংবা ‘গোষ্পদে বিম্বিত আকাশ’ ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য।


লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটির কাহিনিকায়া বিশ্লেষণ করলে আমরা উপরের সবকটি বৈশিষ্ট্য উপলব্ধি করতে পারি । গল্পটি আকৃতিতে খুবই ছোটো, মাত্র চার পৃষ্ঠার একটি নিটোল কাহিনি; ঘটনার গতিও একমুখী।

তপনের গল্প লেখাকে কেন্দ্র করে দুটি মাত্র প্রধান চরিত্র এবং একটি গৌণ চরিত্রকেই অবলম্বন করে ঘটনা পরিণতির দিকে এগিয়ে গিয়েছে।

বিশেষ কোনো তত্ত্বকথা এবং উপদেশাবলি কাহিনি থেকে পাওয়া যায় না। ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে শুরু এবং শেষের মধ্যে বিশেষ একটা আকস্মিকতা লক্ষণীয়।

গল্পটি শুরু হয়েছে হঠাৎ বালক তপনের নবভাবনার মধ্য দিয়ে এবং গল্পটি শেষও হয়েছে তপনের মানস উন্মোচনের এক আকস্মিক অনুভূতির মধ্য দিয়ে।

পাঠকের জন্য একটা বিশেষ চমক অপেক্ষা করে থাকে যখন গল্পের শেষদিকে তপন জানতে পারে যে, ছোটোমেসো তার লেখা গল্পটা আগাগোড়া ‘কারেকশান’ করে দিয়েছেন বলেই গল্পটি ছাপা হয়েছে।

ফলে শেষপর্যন্ত কিশোর লেখক তপনের হৃদয়ে একটা অতৃপ্তি থেকে যায়, তার নিজের হাতে লেখা গল্প কবে কীভাবে ছাপা হবে তা নিয়ে ।


তাই সবদিক বিচার করে বলা যায়, আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি একটি আদর্শ ছোটোগল্প হয়ে উঠতে পেরেছে।

Leave a Comment